যেটা আজ আমরা করছি।
সেটা কি ঠিক করছি?
পড়ুন প্রথম থেকে শেষ, বুঝতে পারবেন আমি কি বলছি!
১. স্কুল থেকে ফিরতে না ফিরতেই সায়ক চেঁচিয়ে বলে উঠলো,"মা তাড়াতাড়ি খেতে দাও,খুব ক্ষিদে পেয়েছে।"
"কেন টিফিনে খাসনি আজকে?
চাউমিন করে দিলাম যে!"
"মা জানো! রাজা আজকে কিছু খেয়ে আসেনি, ওর মায়ের খুব শরীর খারাপ...তাই আমার টিফিনটা আজকে ওকে দিয়ে দিয়েছি।"
"সারাদিন মুখে রক্ত উঠে, তোমাদের জন্য রান্না করবো আর তুমি দাতা কর্ণ সাজছো!
এরপর থেকে আর যদি কাউকে কোনদিনও নিজের টিফিন দাও তবে....টিফিন কেন, কোনোকিছুই দেবে না।"
পিঠে ঘা কতক কিল খেয়ে পঞ্চম শ্রেণীর শিশুটি বুঝতে পারেনা তার অন্যায়টা কোথায়!
২০ বছর পর -
উচ্চপদস্থ সায়ক লাহিড়ী মাকে গাড়িতে তুলে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসার পথে বোঝাতে লাগল নতুন বৃদ্ধাশ্রমটি কত ভালো।
সেখানে তিনি অনেক সুখে থাকবেন।
গাড়ির পিছনের কাচ দিয়ে, নিজের ভিটেটুকু দেখতে দেখতে বৃদ্ধা বুঝতে পারেননা।
তার শিক্ষার গলদটা কোথায় ছিল!!!
২. মাথা নীচু করে বসে থাকা মেয়েটার দিকে তাকিয়ে তার বাবা গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠল, "নিজে পড়ে জয়েন্টে ভালো rank করেছো ঠিকই কিন্তু পড়তে তো হবে প্রাইভেটেই...!
আবার তোমার ভাইও বলেছে ইঞ্জিনিয়ারিংই পড়বে।
এত খরচা আমার পক্ষে করা সম্ভব নয়।
তুমি জেনারেলে গ্রাজুয়েশনটা করো।
আর অমিয় বাবুর সাথে কথাটা বলাই আছে।
বিয়েটা হয়ত সেকেন্ড ইয়ারেই হয়ে যাবে তোমার।
ছেলে হিসাবে তোমার ভাইএর চাকরী পাওয়াটা বেশী দরকার।"
২০ বছর পর -
টেলিফোনে মেয়ের কান্নার আওয়াজ- "বাবা আমায় ক্ষমা কর। আর আমাদের বাড়িতে কোনদিনও এসো না।
তোমার শেষ কেমোথেরাপির পর তোমার জামাই অমর কে বলেছিলাম, বাবা এরপর থেকে আমাদের সাথেই থাকুক, ভাইও বিদেশে।
তার উত্তরে আমাকে বললো, 'নিজের তো এক পয়সা রোজগার করার মুরোদ নেই, একটা পাতি গ্রাজুয়েট...এখন নিজের সাথে সাথে নিজে বাবাকেও আমার ঘাড়ে....লজ্জা করল না বলতে'?"
৩. রান্নাঘরে ৫ মাসের অন্তঃস্বত্বা বউমাকে আদা-রশুনটা দিয়ে শাশুড়ি কাটা কাটা স্বরে জানালো, "বউমা আমাদের বাড়ির নিয়মই হলো, শিলে বাটা মশলা ছাড়া রান্না করিনা, আর সকালের খাবার বাড়ির ছেলেদের খাবার আগে খাইনা"।
ঘড়ির কাঁটা ৯.৩০ ছুঁই ছুঁই।
সকালে উঠে, অশক্ত শরীরে মশলা বেটে স্বামীর পাতের গরম ভাতের দিকে দু-পেট ক্ষিদে নিয়ে আড়চোখে তাকিয়ে কিশোরী মেয়েটা....।
২০ বছর পর -
পক্ষাঘাতে শয্যাশায়ী বৃদ্ধা মহিলাটি, বার বার ঘড়ির কাঁটার দিকে আর দরজার দিকে তাকাচ্ছেন।
ঘড়ির কাঁটা ১১টার ঘরে।
বউমা এখনো খাবারটা দিয়ে গেল নাতো!!
৪. সরকারি উচ্চপদস্থ কর্তা আবেশ সাহা হুইস্কির গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে বউ এর গলার হিরের হারের দিকে তাকিয়ে লঘু হাসিতে বলে উঠলেন, "বুঝলে কিনা, আমি তো নিই স্পিড মানি।
মানে ক্লায়েন্টের টাকায়, তাদের কাজটা একটু স্পিডে করে দেওয়া...আর বদমাইশগুলো এটাকে বলে ঘুষ..!"
পাশে বসা দশ বছরের রকি বাবার আনা দামী প্লে-স্টেশনে গেম খেলতে খেলতে বাবার মুখের দিকে আনমনে একবার তাকিয়ে নিল।
২০ বছর পর -
মদের নেশায় আকন্ঠ চুর রকি সাহা, এক লাথিতে শোবার ঘরের দরজাটা খুলে দিয়ে ভীত সন্ত্রস্ত বৃদ্ধ সাহা দম্পতিকে বলে উঠল,"দশ হাজার টাকা বার করে দাও এখুনি।
আজ সারারাত মস্তি!"
"দিনের পর দিন আমাদের উপর এই অন্যায় অত্যাচার...রকি, এটা ঘোর পাপ..ঘোর পাপ"..থরথর কন্ঠে বলে উঠলেন আবেশ সাহা।
"হাঃ হাঃ! সারাজীবন নিজে ঘুষের টাকা নিয়ে....এখন আমাকে এসেছে নীতিকথার গপ্প মারাতে.....চাবিটা দাও।"
সমাজের বুকে ঘটে যাওয়া একটুকরো কোলাজ.....!!!
ভাববেন, শেয়ার করবেন।
একদম সত্যি কথাটাই বলেছেন।
উত্তরমুছুনhmm
মুছুন